সমন পেয়েছেন বয়স্কা একজন প্যালেস্টিনিয়ান গৃহবধূ ইসরাইলি গোয়েন্দাবিভাগের কাছ থেকে। শুধু এই গৃহবধূই নন, যারাই আল আকসা মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলো সবাই এই মেসেজটা পেয়েছে। মেসেজে যা লেখা ছিলো আরবি থেকে অনুবাদ করলে দাড়ায়, “হ্যালো! আল আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনায় আপনাকে সনাক্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় আপনাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে – ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা”। এই গৃহবধূ, যার বয়সের কারণে সন্দেহের তালিকায়ই আনা ঠিক হবেনা, কিন্তু আল আকসা জামে মসজিদের হাটা দুরত্বে থাকার কারণে এবং শুধুমাত্র আল আকসা মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে এই সমন।
উপরের ঘটনা ছিলো সোমবারের, এবার আসি আজকের ঘটনায়, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নির্বিচার বিমান হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৫৩ জনে। এর মধ্যে ১৪ জন শিশু রয়েছে।

বার্তা সংস্থা আল জাজিরা জানায়, বেশ কিছু স্থাপনায় বুধবার ইসরাইলী সেনারা বিমান হামলা চালায়। হামলায় বেশ কিছু ভবন ধ্বংস হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যম জানায়, সোমবার আল আকসা মসজিদে মুসল্লিদের উপর ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদে হামাস বিমান হামলা চালায়। এর পর থেকেই ইসরাইলী সেনারা গাজায় অব্যাহতভাব বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইল বলছে, তারা হামাসের রকেট উৎক্ষেপন এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে হামাসের হামলায় ৫ জন ইসরাইলী নাগরিক নিহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। ২০১৪ সালের পর ইসরাইলের এটাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট হামলা।
এদিকে জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শান্তিদূত টর ওয়েননেসল্যান্ড অবিলম্বে সংঘাত ও হামলা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। এটিই ইসরাইল-হামাসের মধ্যে সংঘটিত সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ।

ইসলামী সম্মেলন সংস্থা ওআইসি জরুরী ভার্চুয়াল বৈঠকে আল আকসা মসজিদে নামাজরত নিরীহ মুসলমানদের উপর ইসরাইলী হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
সংকট নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রসেডেন্ট রিসেপ এরদোয়ান টেলিফোনে আলাপ করেছেন। উল্লেখ্য, আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে ইসরাইলি প্রশাসনের সখ্যতা থাকলেও, বাইডেন প্রশাসন সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। বাইডেন বলেছিলেন, তারা মধ্যপ্রাচ্যে আর হস্তক্ষেপ করবে না কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং নিরীহ ফিলিস্তিনের নাগরিকদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাইডেন পেন্টাগনের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সাথে মিটিং এ আছেন।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই আবার নির্বাক হয়ে অন্যদের নির্লিপ্ততা দেখছেন। এরকমই একটা পোষ্ট শাহ্ আনান আব্দুল্লাহ’র ফেসবুক পোষ্ট থেকেঃ
“আমার ফেইসবুকে কিছু ধর্মনিরপেক্ষ মানসিক মানুষ আছে। যারা যখনই পৃথিবীতে খারাপ কিছু হয়,তখনই তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার প্রতিবাদ জানায়। আমি চিন্তা করতাম তারা হয়তোবা অনেক মজার মানুষ এবং তার থেকেও বেশি তারা মনে হয় অনেক স্মার্ট কারণ, দৈনন্দিন বিষয়ে তারা অনেক বেশি জানে বা বোঝে এবং তারা মনে হয় অনেক প্রজ্ঞাবান।
কিছু বেশকিছুদিন আগে চারপাশে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু দেখে এবং সেসব মানুষের অনলাইন কার্যকলাপ দেখে একটা বিষয় আমার বোধগম্য হলো যে, তারা আর যাই হোক না কেন নিরপেক্ষ নয়।যদি তারা কিছু হয়েই থাকে,তাহলে তারা চরম মুনাফিক ধরনের মানুষ (বোঝার সুবিধামত এখানে “সুবিধাবাদী/ ভন্ড ” বলা যায়।)
কারণ, একজন অজ্ঞ, খারাপ লোক যখনই কিছু খারাপ কাজ করে থাকে,তারা সেটাকে নিজের উপরে টেনে নেয় এবং তারা তখনই সেটাকে কেন্দ্রকরে অনেক কিছুই আলোকপাত করে থাকে তাদের সোশাল মিডিয়ায়। (অনেক সময় দেখা যায় যে,তাদের দেওয়া তথ্য ভূল,বা অনেকক্ষেত্রে সঠিক,কিন্তু বেশিরভাগই সেখানে প্রকাশ পায় তাদের চিন্তাধারা)। তারা মেয়েদের সুরক্ষা,নিরাপত্তা, মেয়েদের বিভিন্ন বিষয়ে (এমন কি তাদের পিরিয়ডের বিষয়সমূহ সহ) খুব চিন্তিত বা মনোযোগী। কিন্তু দেখা যায় যে তারাই মেয়েদেরকে নিয়ে বেশি খারাপ কথা বলে থাকে, তাদের অবর্তমানে তাদের অপমানও করে থাকে।
তারা বোঝায় যে তারা মানবধর্ম বাদে আর কোন ধর্মের অনুসারী নয়। তাদের ভাষ্যমতে তারা অন্য কোন ধর্মকে ছোট করে না, কিন্তু দেখা যায় এটাও সবথেকে বেশি তারাই করে থাকে। যখনই একজন মুসলমান কোন খারাপ কাজ করে, তারা সেটাকে সবার সামনে তুলে ধরার জন্যে খুব উদগ্রীব। এমনকি ইসলামের নিয়ম-নীতি নিয়েও তাদের সমস্যার অন্ত নেই।
আল-আকসা মসজিদে ঘটে যাওয়া কিছু অমানবিক কার্যকলাপের পর, কোথায় সেসব মানবপ্রেমী চিন্তিত মনীষীরা? কোথায় তাদের সেইসব প্রতিবাদ? আমি তো কোথাও দেখছি না,আপনি কি পাচ্ছেন?
পরিশেষে, আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই, তা হলো, এসব ভন্ডামী বন্ধ করুন।
শিখুন – পর্যবক্ষন করুন – তারপর ছড়ান।”